হাঁসের পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK
27
27

৩.৩ হাঁসের পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত রোগের নাম, কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

অপুষ্টিজনিত রোগ : 

খাদ্যের যে কোনো এক বা একাধিক খাদ্য উপাদানের ঘাটতির কারণে হাঁসের বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত হয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। হাঁসের ভিটামিন সমূহের অভাবজনিত রোগ, চিকিৎসা ও প্রতিকারের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ

ক) ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ :

ভিটামিন- এ 

কতদিন পর্যন্ত হাঁসগুলো এই ভিটামিনের অভাবে ভুগছে তার উপর ভিত্তি করে ভিটামিন-‘এ' এর অভাবে সৃষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়। বয়স্ক হাঁসে লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। কিন্তু বাচ্চা হাঁসে ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভিটামিন-'এ' এর অভাবজনিত লক্ষণগুলো অবস্থা ও বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • চোখের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়, চোখের পাতা ফুলে যায় ৷ 
  • নাক ও চোখ দিয়ে আঠার মতো জলীয় পদার্থ বের হয় এবং রাতকানা রোগ হয়। 
  • হাঁটু ও চামড়ার রং হলুদ ফ্যাকাশে হয়ে যেতে থাকে । 
  • খাবার গ্রহনে আগ্রহ কমে যায় ও পালকের চাকচিক্য কমে যেতে পারে। 
  • মাথার ঝুঁটি, গলার ফুল নীলাভ ও শুষ্ক হয়। 
  • ঝুঁটি শুষ্ক ও ফ্যাঁকাশে হয়ে যায় । 
  • বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায় ৷

অভাব নিরূপণ :

  • খাদ্যে ভিটামিন এর পরিমাণ সঠিক আছে কি না তার রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা। 
  • রক্তের সিরামে ভিটামিন এর পরিমাণ নির্ণয় করা ৷
  • চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় কি না তা লক্ষ্য করার মাধ্যমে এই ভিটামিনের অভাবজনিত অবস্থা নিরূপণ করা যায়।

প্রতিকার ও চিকিৎসা :

খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন। শাকসবজি, ভুট্টা, গম, ছোট মাছ, ফলমূল, ফলমূলের খোসা, হাঙ্গর মাছের তৈল খাওয়ালে ভিটামিন-এ এর অভাব দরূ হয়। লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিদিন বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন এ.ডি.ই. দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমত খাদ্য বা পানির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে।

ভিটামিন ডি 

শরীরের হাড় এবং ডিমের খোসার গঠনের জন্য অর্থাৎ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর কার্যকারিতার জন্য এই ভিটামিন অত্যন্ত জরুরি। সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে বা খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে ভিটামিন- ডি নষ্ট হয়ে যায় ফলে হাঁস খাবার হতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন-ডি পায় না।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পায়ের অস্থি নরম, মোটা ও বাঁকা হয়ে যায়, ফলে হাঁস ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। একে “রিকেট/অস্টিওম্যালেসিয়া” রোগ বলা হয়। 
  • ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে হাড় বাঁকা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় । 
  • ঠোঁট, হাড় ও পায়ের নখ নরম হয়ে যায়, ফলে হাঁস হাঁটুর উপর ভর দিয়ে চলে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে ও পাঁজর ফুলে যায় ৷

রোগ নিরূপণ :

  • লক্ষণ দেখে রোগ নিরূপণ তথা ভিটামিন-ডি এর অভাব বোঝা যায় ৷ 
  • খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ পরিমাপ করে এবং
  • সন্দেহজনক হাঁসকে যদি ভিটামিন-ডি সরবরাহ করে ভালো ফল লাভ করা যায় তাহলে বুঝতে হবে হাঁসগুলো ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগছিল।

সতর্কতা : অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন-ডি খাদ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োগ করলে হাঁসের কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন কোম্পানির এ.ডি.ই. দ্রবণ নির্দেশমত খাওয়াতে হবে। 
  • যেহেতু ভিটামিন-ডি এর সাথে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত তাই একই সাথে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম এর প্রয়োজনীয় ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
  • খামারে ছোট বাচ্চাগুলোকে সম্ভব হলে দিনের কিছুটা সময় রোদ্রের সংস্পর্শে আসার সুযোগ দিলে এবং সকাল বেলা হাঁসের জন্য সূর্যালোকের ব্যবস্থা করলে ভিটামিন-ডি এর অভাবজনিত রোগের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।

 

ভিটামিন ই 

ভিটামিন -ই এর অভাবে হাঁসের এনসেফালোমেলাসিয়া, মাসকুলার ডিসট্রোফি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি রোগ হতে পারে। খাদ্যে অপর্যাপ্ত সেলিনিয়ামের উপস্থিতি, বিভিন্ন উপকরণের সঠিক অনুপাতে মিশ্রণ না করা, তৈল জাতীয় খাদ্যের অক্সিডেশন ইত্যাদির কারণে ভিটামিন-ই এর অভাব হতে পারে। 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • আক্রান্ত হাঁস হাঁটতে পারে না, পা টান করে ছেড়ে দেয় । 
  • বাচ্চার মাথার বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয় ও জায়গাগুলো নরম হয়। এ রোগকে “এনসেফালোমেলাসিয়া” বলে । 
  • বুক ও উরুর মাংস শুকিয়ে যায়, একে “মাসকুলার ডিস্ট্রফি” বলে । 
  • চামড়ার নিচে পানি জমার কারণে শরীর ফুলে যায়, একে “অ্যাকজুডেটিভ ডায়াথেসিস” বলে ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • চিকিৎসার জন্য বাজারে প্রাপ্ত এ.ডি.ই দ্রবণ প্রস্তুতকারকের নির্দেশমতো খাদ্য বা পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 
  • রোগ প্রতিরোধের জন্য সর্বদা খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। 
  • খাদ্যে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তৈল জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। 
  • সংরক্ষিত খাদ্যে এন্টি অক্সিডেন্ট ব্যবহার করতে হবে। 
  • প্রয়োজনীয় পরিমাণ খনিজ বিশেষত সেলেনিয়াম খাদ্যে মিশাতে হবে।

 

ভিটামিন 'কে' (এন্টিহিমোরেজিক ভিটামিন)

এই ভিটামিনটি শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। এর অভাব হলে ঠোঁট কাটার সময় বা সামান্য আঘাতে অধিক রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার আমাশয় আক্রান্ত হলে পায়খানায় প্রচুর রক্ত দেখা যায়। খাদ্য ও পানিতে যদি সালফার জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয় তবে এই ভিটামিনটির মেটাবলিজমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে অন্ত্রের মধ্যে ভিটামিন-কে উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়াসমূহ মরে যায়, ফলে দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে এ ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্যদ্রব্য অনেক দিন সংরক্ষণ করলেও খাদ্যে উপস্থিত এ ভিটামিনটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • এ ভিটামিনের ঘাটতির কারণে শরীরে কোথাও কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে রক্ত পড়া বন্ধ হয় না। ফলে হাঁসের মৃত্যু ঘটে। 
  • ঠোঁট কাটার পর অধিক সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয় ফলে রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়ে হাঁস মারা যেতে পারে। 
  • চামড়া ও মাংস পেশিতে রক্তপাত হয়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • ঠোঁট কাটার কয়েক দিন পূর্ব হতে খাদ্যে ভিটামিন-কে সরবরাহ করা প্রয়োজন ৷ 
  • রক্ত আমাশয় এর চিকিৎসা চলাকালেও অতিরিক্ত ভিটামিন-কে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 
  • সবুজ ঘাস, মাছের গুঁড়া শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়ালে ঘাটতি দূর হয় । 
  • চিকিৎসার জন্য খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে। 
  • অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেয়ার সময় এবং তারপর কিছুদিন খাদ্যে ভিটামিন-কে সরবরাহ করতে হবে।

 

ভিটামিন ‘বি -১' (থায়ামিন) 

পানিতে দ্রবণীয় এ ভিটামিনটির অভাবে খুব তাড়াতাড়ি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। খাদ্যে অধিক পরিমাণে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন বি-১ বিদ্যমান না থাকলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় । 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • অরুচি এবং খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা যায় । 
  • দৈহিক ওজন হ্ৰাস পায় । 
  • পালক উসকো খুসকো হয়ে যায় । 
  • দুর্বলতা এবং হাঁটতে অনীহা দেখা যায়। 
  • ঝিমানো ভাব লক্ষ্য করা যায়। 
  • ঘাড় বাঁকানো বা ঘুরিয়ে উল্টোভাবে রাখা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় ৷ 
  • কখনও কখনও হাঁস ঘাড় পিছনের দিকে বাঁকা করে উর্ধ্বমুখী হয়ে অবস্থান করে। একে “স্টার । গেজিং” বলে ।

রোগ নির্ণয় :

  • লক্ষণ অনুযায়ী ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে বুঝতে পারা । 
  • আক্রান্ত হাঁসের খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে আক্রান্ত হাঁসগুলো ভিটামিন বি-১ এর অভাবে ভুগছে কি না। 

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • পানি বা খাবারে ভিটামিন বি-১ সরবরাহ করা। প্রথম কয়েক দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থাৎ ১০- ১৫ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি খাবারের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। 
  • খুব অসুস্থ হাঁসের জন্য আরও বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি-১ খাবারে সরবরাহ করা প্রয়োজন । 
  • এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিদিন খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১ মিশিয়ে দিতে হবে।

 

ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লাভিন)

 সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এবং খাবার পানির পিএইচ (অম্লত্ব) ভিটামিন বি-২ কে নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই খাদ্যে এর অভাব দেখা দিতে পারে।

অভাবজনিত লক্ষণ : 

বাচ্চা অবস্থায় প্রথম কয়েক সপ্তাহে ভিটামিনটির অভাব হলে হাঁসের মধ্যে-

  • দৈহিক দুর্বলতা ও অপর্যাপ্ত বৃদ্ধি হয়। 
  • শুকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবে পালক গজায় না । 
  • পাতলা পায়খানা হয়। 
  • তীব্র আক্রান্ত হাঁসের পা অবশ হয়ে গিয়ে বুকের উপর ভর দিয়ে হাঁটে। 
  • প্রায় সময় এ ভিটামিনের অভাবে পায়ের অবশতাজনিত রোগ দেখা যায় যাকে “কার্ল-টো- প্যারালাইসিস” বলে। এক্ষেত্রে দুই পা দু' দিকে অর্থাৎ সামনের দিকে এক পা চলে পিছনের দিকে এক পা চলে যায় ফলে পাগুলো অচল হয়ে যায়। তাই তারা হাঁটতে পারে না এবং না খেয়ে মৃত্যুবরণ করে। 
  • ব্রিডার হাঁস হলে ডিম হতে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় এবং ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায়।

রোগ নিরূপণ : 

রোগের লক্ষণ দেখে ভিটামিন বি-২ সরবরাহ করলে যদি লক্ষণগুলো দ্রুত চলে যায় তবে বুঝতে হবে হাঁসগুলো এ ভিটামিনের অভাবে ভুগছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

  • খাদ্যের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি-২ থাকা দরকার । 
  • মাঝে মধ্যে পানিতে অন্যান্য ভিটামিনের সাথে বি-২ সরবরাহ করা প্রয়োজন যাতে এই ভিটামিনের অভাব না হয়। 
  • আক্রান্ত হাঁসগুলোকে আলাদাভাবে রেখে ভিটামিন বি-২ খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায় ।

 

ভিটামিন বি-৬ (পাইরিডক্সিন) 

খাবারের মধ্যে অধিক পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ থাকলে এবং সে অনুযায়ী ভিটামিন বি-৬ এর স্বল্পতা থাকলে সাধারণত এ ভিটামিনটির অভাবজনিত সমস্যা দেখা যায় । কারণ এটি প্রোটিনের বিপাকে সাহায্য করে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা অরুচি, উসকো খুসকো পালক দেখা যায় ৷ 
  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ বা কম হওয়া। 
  • প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় । 
  • গুরুতর আক্রান্ত হাঁসগুলো উদ্দেশ্যহীনভাবে ছুটাছুটি করতে থাকে এবং সবশেষে খিঁচুনি দেখা যায় এবং অবশেষে মৃত্যু হয় ।

রোগ নির্ণয় : 

খাদ্যে ভিটামিনের পরিমাণ নির্ণয় করে ও রোগের লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণার ভিত্তিতে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে ঐ ঝাঁকের হাঁসগুলো ভিটামিন বি-৬ এর অভাবে ভুগছিল।

প্রতিকার ও চিকিৎসা :

  • লক্ষণ প্রকাশ পেলে খাবারের বা পানির সাথে ভিটামিন বি-৬ সরবরাহ করে এ রোগের লক্ষণ প্রশমিত করা যায় ৷ 
  • নিয়মিত পরিমাণমত ভিটামিন বি-৬ খাবারের সাথে সরবরাহ করলে এর অভাবজনিত লক্ষণ দেখা যায় না।

 

বায়োটিন 

অধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে বায়োটিন সৃষ্টিকারী জীবাণু মরে গিয়ে কিংবা খাদ্যের মধ্যে বায়োটিনের পরিমাণ কম হলে অথবা খাদ্যে বায়োটিন নষ্টকারী কোনো পদার্থের উপস্থিতি থাকলে হাঁসে এটার অভাবজনিত বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চা হাঁসের শরীরের অসাড়তার হাত থেকে রক্ষার জন্য এ ভিটামিনটির বিশেষ প্ৰয়োজন ৷ 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পালক ভেঙে ঝুলে পড়ে ও পরে হাড় বাঁকা হয়ে যেতে পারে। 
  • অনেক সময় চোখের পাতা বুজে থাকে বা চোখ বন্ধ হয়ে যায় ।
  • বাচ্চা হাঁসের পায়ের নিচে, মুখের কোণায় এবং চোখের পাতায় কড়া পড়ে যেতে পারে। 
  • ডিমের ভিতরে বাচ্চা মরে যায়। 
  • ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় ।

রোগ নির্ণয় :

  • লক্ষণ দেখে বায়োটিন প্রয়োগের ফলে যদি চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় তবে বুঝতে হবে হাঁসের বায়োটিনের অভাবে ভুগছিল। 
  • খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ এবং রোগের লক্ষণ দেখে সমন্বয় করেও রোগ নির্ণয় করা যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ বায়োটিন মিশাতে হবে। 
  • রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে পানিতে অতিরিক্ত বায়োটিন মিশাতে হবে। 
  • খাদ্য বা পানিতে অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে। 
  • খাদ্যস্থিত বায়োটিনের পরিমাণ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যাতে বায়োটিনের অভাব না হয়।

 

কলিন : 

হাঁসের শরীরে বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপে কলিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শারীরিক অসাড়তা দূর ও শরীরের বৃদ্ধির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দেহের বিভিন্ন টিস্যু বা কলার গঠনে এবং স্নায়ুতন্ত্র সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাঁসের খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণে কলিন সরবরাহ করা বাঞ্ছনীয় ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • পায়ের হাড় নরম ও বাঁকা হয়ে হাঁস অসাড় হয়ে যায়। 
  • দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। 
  • ব্রয়লার ব্রিডার হাঁসের কলিজায় অতিরিক্ত চর্বি ও রক্তক্ষরণজনিত লক্ষণ দেখা দেয় । 
  • ব্রয়লার ব্রিডার হাঁসের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায় ফলে ডিম পাড়াও কমে যায়।

রোগ নির্ণয় : 

লক্ষণ দেখে এবং পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এছাড়াও খাদ্যস্থিত কলিন বৃদ্ধি করে যদি ফল পাওয়া যায় তবে ধরতে হবে কলিনের অভাব ছিল।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসাঃ 

খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ সয়াবিন মিল, গম ভাঙা, ফিস মিল ইত্যাদি থাকায় হাঁসে কলিনের অভাব সাধারণত হয় না। কারণ সয়াবিন মিল ও ফিসমিলে প্রচুর পরিমাণে কলিন থাকে। আবার গম ভাঙার মধ্যে বিটেইন নামক এক প্রকার পদার্থ থাকে যা কলিনের মতো মিথাইল দানকারী হিসেবে কাজ করে কলিনের অভাব পূরণ করে। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, প্রায়ই দেখা যায় হাঁসে কলিনের অভাব হয়। তাই বাজারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যে কলিন বা কলিন ক্লোরাইড পাওয়া যায়, তা প্রয়োজন মত খাবারে মিশিয়ে দিতে হবে। তবেই কলিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব ।

বাজারে প্রাপ্ত কলিন প্রায় সময়ই কলিন ক্লোরাইড নামে বিভিন্ন শতাংশের (%) কোলিন ক্লোরাইড হিসেবে পাওয়া যায়। যেমন : ক্লোরাইড ৫০% বা কলিন ক্লোরাইড ৪০% ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, কোলিন ক্লোরাইডের মধ্যে প্রকৃত কলিনের পরিমাণ ৮৬.৭৯%। তাই উক্ত কলিন ক্লোরাইড খাবারে মিশানোর সময় প্রকৃত কলিনের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ণয় করে প্রয়োজন অনুযায়ী কলিন ক্লোরাইড মিশাতে হবে।

 

ভিটামিন বি-১২ (সায়ানো-কোবালামিন)

শরীরের কোষের নিউক্লিক এসিড তৈরিতে, শর্করা ও চর্বির বিপাকীয় প্রকিয়ায় ভিটামিন বি-১২ সাহায্য করে। তন্ত্রের বিভিন্ন জীবাণু এই ভিটামিনটি তৈরি করে বিধায় এই ভিটামিনটির অভাবজনিত রোগ খুব কম দেখা দেয় এবং খাদ্যে এর প্রয়োজন অত্যন্ত নগণ্য। পাখির বিষ্ঠার সাথে যে জীবাণু বের হয় এবং লিটারে পড়ে সেগুলোও এই ভিটামিনটি তৈরি করতে পারে। ফলে লিটারে পালিত মোরগ-মুরগির এই ভিটামিনের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা আরও কম। যদি হাঁসকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অত্যধিক পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়, তবে এই ভিটামিনের অভাবজনিত রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় ৷ 
  • মৃত্যুর হার বেড়ে যায় এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার হার কমে যায় । 
  • ডিমের মধ্যে বাচ্চার মৃত্যুও ঘটতে পারে।

রোগ নির্ণয় : 

অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ইতিহাস, লক্ষণ ইত্যাদি দেখে ভিটামিন বি-১২ দিয়ে চিকিৎসা দিলে যদি ভালো ফল পাওয়া যায়, তবে বুঝতে হবে হাঁসে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব ছিল ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • লক্ষণ দেখা দিলে পানি বা খাবারের সাথে ভিটামিন বি-১২ সরবরাহ করতে হবে। 
  • সুস্থ অবস্থায় মাঝে মাঝে পানির সাথে ভিটামিন সরবরাহ করতে হবে।

 

ভিটামিন সি 

স্ট্রেস বা পীড়ন প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর উপাদান হিসেবে ভিটামিন-সি ব্যবহার হয়ে থাকে। হাঁসে ভিটামিন সি যথেষ্ট পরিমাণে নিজেরাই উৎপাদন করতে পারে। দৈহিক বৃদ্ধি, বীর্য উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন রকম বিষক্রিয়া বিশেষত কিছু খনিজ লবণের বিষক্রিয়ার হাত থেকে হাঁসকে রক্ষা করার ক্ষমতা ভিটামিন-সি এর রয়েছে। খাদ্যে ভিটামিন-সি এর অভাব থাকলে বা হাঁস অত্যধিক গরম আবহাওয়ায় থাকলে বা পীড়ণ (স্ট্রেস) সৃষ্টি হলে হাঁসের ভিটামিন-সি এর অভাব দেখা দিতে পারে ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। 
  • দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যায় ৷ 
  • খাদ্য হজম কম হয়। 
  • পীড়নের মধ্যে পড়লে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে অর্থাৎ পীড়ণ সহ্য করার ক্ষমতা কমে যায় । 
  • প্রজনন হাঁসার প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় ।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-সি মেশাতে হবে। 
  • হাঁসের ঘরের মধ্যে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। 
  • পীড়ন হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে পানির সাথে অতিরিক্ত ভিটামিন-সি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ও পরে কয়েকদিন ভিটামিন-সি সরবরাহ করতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • ভিটামিন-এ এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ কীভাবে বোঝা যায়?
  •  ভিটামিন-ডি এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ । 
  • ভিটামিন বি-১ এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ । 
  • ভিটামিন বি-৬ এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ ।

 

খ) খনিজ পদার্থের অভাবজনিত রোগ (ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস)

খনিজ পদার্থের কাজ 

* হাঁসের দৈহিক বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য রক্ষা ও প্রজননের জন্য খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক । 

* হাঁসের দেহের অস্থি গঠন, ডিমের খোসা তৈরীতে খনিজ পদার্থ অত্যাবশ্যক । 

* দেহের অম্লত্ব-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করে । 

* খনিজ শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্যে বিপাকে সাহায্যে করে।

 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • আক্রান্ত হাঁসের ঠোঁট নরম ও বাঁকা হয় । 
  • অস্থির গঠন ঠিকমতো হয় না ।
  • রক্ত জমাট বাঁধে না । 
  • রিকেট রোগ ও কেজ লেয়ার ফ্যাটিগ রোগ হয় । 
  • বাচ্চা ফোটার হার কমে যায়।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা :

  • মাছের গুঁড়া, ঝিনুক, হাড়, দানা শস্য, পালং শাক ইত্যাদি হাঁসের খাদ্যে সরবরাহ করলে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় । 
  • হাঁসের খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে- বাচ্চা হাঁসে ২.২ : ১। 
  • হাঁসের খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে- বাড়ন্ত হাঁসে ২.৫ : ১। 
  • হাঁসের খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত হবে-ডিমপাড়া হাঁসে ৯ : ১।

 

সোডিয়াম 

সোডিয়ামের কাজঃ

  • দেহের অম্ল-ক্ষারত্ব সমতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। 
  • অস্থি গঠন করে।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না। 
  • হাড় নরম হয় । 
  • রক্ত পাতলা হয়। 
  • ডি-হাইড্রেশন দেখা দেয় ও মৃত্যুও ঘটে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা : খাদ্যে সাধারণ লবণ সরবরাহ করে এর অভাব দূর করা যায়।

 

জিংক 

জিংকের কাজঃ

  • হাঁসের দৈহিক বৃদ্ধি, পালক গজানো ও ডিম উৎপাদনের জন্য জিংক প্ৰয়োজন ৷ 
  • অস্থির গঠনে জিংক প্ৰয়োজন ।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না । 
  • পালক কম গজায় ও পায়ের চামড়া উঠে যায়। 
  • পায়ের হাড় খাটো ও মোটা হয়। 
  • হাঁস ঠোকরা ঠুকরি করে।

প্রতিকার ও চিকিৎসা : হাঁসের খাদ্যে জিংকের বা জিংক সমৃদ্ধ উপকরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে ।

 

সেলেনিয়াম 

সেলেনিয়ামের কাজঃ 

সেলেনিয়াম হচ্ছে গুটাথায়োন পারোক্সিডেজ ( Glutathion Peroxidase) নামক এনজাইমের অংশ যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে।

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • ফুটানোর ডিম বসানোর ৪র্থ দিনে ভ্রুণের মৃত্যু হয়। 
  • চামড়ার নিচে পানি জমে । 
  • দৈহিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না । 
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ।

প্রতিকার ও চিকিৎসা : ছোলা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে বা খাদ্যে সেলেনিয়াম যুক্ত করলে এর অভাব দূর হয় ।

 

লৌহ ও কপার 

অভাবজনিত লক্ষণ :

  • রক্তশূণ্যতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয় ।
  • লাল পালক এর রং ফ্যাকাশে হয় । 
  • স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ৷

প্রতিকার ও চিকিৎসা : শাকসবজি, ঘাস, মাছের গুঁড়া ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। খাদ্যে ফেরাস সালফেট ও কপার সালফেট সংযোজন করতে হবে।

 

শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ

  • হাঁসের শরীরে খনিজ পদার্থের কাজ লেখ।
  • ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ ।
  • সেলেনিয়াম এর অভাবজনিত রোগের লক্ষণ লেখ ।

 

 

Content added By
Promotion